স্বদেশ ডেস্ক:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে স্থানীয় পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তের জন্য সেখানকার স্থানীয় সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল, সমাজসেবা অফিসারসহ তিনজনের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারকে (এডিসি) এ বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার (৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) এই আদেশ দেন। আদালতে আজ শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট জেডআই খান পান্না, ইয়াদিয়া জামান, তানজিম আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও এ এম জামিউল হক ফয়সাল।
এ ছাড়া ঘটনার যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, তা সরিয়ে নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে একটি কপি সংরক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
গতকাল রোববার দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। টনক নড়ে প্রশাসনের। জানা গেছে, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়া ও টাকাও দাবি করে না পেয়ে ঘটনার ওই ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ঘটনার প্রধান বাদল ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ মোট নয়জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আসামিরা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগী নারী। এ ছাড়া তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকাও দাবি করে বাদল ও দেলোয়াররা। এভাবে একমাস ধরে ভয় দেখাতে থাকে তারা। যে কারণে তিনি নিজের বসত বাড়ি ছেড়ে অন্য এলাকার আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে যান। তারপরই নির্যাতনের ওই ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করে দেয় অভিযুক্তরা।
গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকের এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গতকাল রোববার বেগমগঞ্জ থানায় মামলা দুটি করেন। মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন বাদল ও দেলোয়ারসহ অন্যান্যরা তার স্বামীকে বেঁধে রেখেছিলেন। তারা ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা তারা ভিডিও ধারণ করে। গত এক মাস ধরে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে অনৈতিক প্রস্তাবও দিচ্ছিল উল্লিখিত আসামিরা। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয় তারা।
এদিকে বেগমগঞ্জের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার হয়েছে। ঘটনার প্রধান আসামি বাদলকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১)। অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দেলোয়ারকে। গতকাল রোববার গ্রেপ্তার হয় আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহ নামে অপর দুই আসামি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।